আজ মানুষ-মারা প্রাকটিস করে এলাম.
মারণ-অস্ত্রটি একটি আগ্নেয়াস্ত্র: কালো-হলদে, কাঠ ও লোহার সমবায়.
সামনে রাখা ছিল. হাতে তুললাম.
বড়, ভারী ওই যন্ত্রের চারপাশে আমার ছোট্ট হাতের দুই মুঠি কিরকম যেন
হারিয়ে গেল. কিছুটা মায়া লাগলো আমার ওই দুই হাতের জন্য. কত রকমের কাজ জানে, করে,
করত, আমার এই পুরনো দুই হাত. ছোট বেলায় যখন সোমবার সন্ধেবেলায় জ্যোতিদের বাড়ি আঁকা
শিখতে যেতাম, তখন তুলি ধরত হাতটি, কত রঙের পরশ ছুইয়ে যেত ড্রয়িং খাতার বুকে. তারপর
আরও কি কি যে করত : সাইকেল এর হ্যান্ডেল ধরা, রুমালে ফুলের নকশী কাটা, রবি কবির মম চিত্তে গানে নাচের মুদ্রা
তোলা, আরও কত কি. তার অনেক পর কড়াইয়ের পায়েশ পোলাউ এ খুন্তি নাড়া, লক্ষী পুজোর দিন সিমেন্টের মেঝেতে সাদা
ফ্যাব্রিক পেন্ট দিয়ে আল্পনা আঁকা, আজকাল আবার সেলফোনের পাতায়ে শব্দের আঁকি বুঁকি
কাটা....এই সব আর কি... আজ তাই হয়েত আমার হাতদুটিকে মনে হলো কিছুটা দিশেহারা...
অস্ত্র তুলে তাক লাগলাম. One absolutely straight line between
my eye, the frontsight, the aperture and the white target far away. ডানপাশে দাড়িয়ে
থাকা বিশালকায়ে জঙ্গীটি হয়েত মনে মনে হাসলো! হয়েত ভাবলো, দেখা যাক পুঁচকে মেয়েডাক্তারটা
কি খেল দেখায়ে অস্ত্রের সাথে. সত্যি তো, আমি নিজেই জানিনা আমার দিশেহারা ছোট্ট হাত
দুটি কি করবে ওই বিরাট অস্ত্রটির সাথে. বেশি ভাবার সময় পেলাম না কেননা বাঁপাশে তৈনাত জঙ্গি তক্ষুনি হুন্কার দিল: FIRE!
আর আমাকে অবাক করে দিয়ে দেখলাম আমার হাত দুটি কি অনায়েসে, স্থির ভাবে টিপ
নিল, তারপর পরম শান্তিতে ট্রিগার টিপলো...যত গুলি অস্ত্র আমার গিলেছিল, তত গুলি এক
একটা পাহাড় কাঁপানো গর্জনে নিক্ষেপিত হলো তার ঘভীর পেট থেকে. প্রতিবার আমার হাতে ধরা
অস্ত্রটি একটু কাঁপলো, কিন্তু পদচ্যুত হলো না. অবশেষে দেখা গেল
প্রতেকটি গুলি নিশানায়ে লেগেছে. আমার আশ্চর্যের সীমা রইলো না.
সৈন্য কর্তা বাহবা দিল. ডাক্তারবাবু, সুন্দর
হয়েছে. ভেরি গুড.
আমি তাকালাম ভালো করে ওর মুখে. অল্পবয়স্ক. মুখে এক সরল, মিষ্টি হাসি. অনেক কিছু শেখালো সে আমায়, অস্ত্রের এনাটমি, ফিসিওলোজি. বলল:
আমি তাকালাম ভালো করে ওর মুখে. অল্পবয়স্ক. মুখে এক সরল, মিষ্টি হাসি. অনেক কিছু শেখালো সে আমায়, অস্ত্রের এনাটমি, ফিসিওলোজি. বলল:
Develop your arm strength. আরও প্রাকটিস করবেন, তাতে আপনার ফায়রিং আরও ভালো
হবে, দুরুস্ত হবে. ইউ হ্যাভ অ knack ফর ইট, ডাক্তারবাবু.
ফিরতে ফিরতে ভাবলাম, মানুষ মারা শেখাটা খুব বেশি কঠিন তো না .
আমার কোনদিন ভালো লাগেনি এই সব গোলা বারুদ, রাইফেল পিস্তল কামান;
এমনকি কোনদিন ভালো লাগেনি কালিপুজোর বিদঘুটে বাজি পটকাও.... কিন্ত...অদ্ভূত
কান্ড: আমার ছোট্ট, গোবেচারা, কবিতা লেখা, রান্না করা, ছবি আঁকা দুই হাত কত সাবলীল
ভাবেই না আঁকড়ে ধরল রাইফেল, নিল নিশানা, টিপলো ট্রিগার......কি বিস্ময়কর ব্যাপার রে বাবা.
ফিরছি আমি. দুই পাশে জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়. তার মধ্যে দিয়ে কুলকুল করে
বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি নদী. দেখি আর একটা পেল্লাই জঙ্গি বসে আছে নদীর ধারে, পাশে পাথরের
উপর চায়ের গ্লাস. অস্ত্র নীচে নামানো.
ব্রেক হবে তার বোধ হয়ে. সে গান শুনছে মোবাইলএ. আমার গাড়ির আওয়াজ, নদীর আওয়াজ
ছাপিয়ে ভেসে এলো আশা ভোঁসলের মিষ্টি গলা: do lafzon ki hai dil ki kahani
ya hai mohabbat ya hai jawaani......
মানুষ অস্ত্র তোলে কত কারণে, পেটের দায়ে, আত্মরক্ষার দায়ে, দেশরক্ষার
দায়ে. কৃষ্ণ তো বলেই গেছেন There is nothing greater than a Righteous War,
a war that defends Dharma......
ভাবছি এই সব ছুটকো কথা. গাড়ি চলছে আমার, আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ দিয়ে.
রাস্তার পাশে দেখি কোন এক দেবতার গ্রাম্য মন্দির. কালো পাথরের গায়ে লেগে, গেরুয়া
পতাকা উড়িয়ে দাড়িয়ে আছে. আমার ভালো লাগে এইসব নাম-না-জানা পথের মন্দিরগুলি. এখানের ঈশ্বর খুব
সাধারণ হন, খুব approachable. তাই ফিরে যেতে যেতে এই পাহাড়ি মন্দিরের ইশ্বরের
কাছে আমি একটা প্রার্থনা ছেড়ে এলাম. মনে মনে, চুপি চুপি. একটি বায়েনা,
একটি আবদার:
No comments:
Post a Comment
Hi! Thanks for stopping by!